আমাদের সম্পর্কে

আমড়াতলী সি আলী উচ্চ বিদ্যালয়’র ইতিহাস :

শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের এক অনন্য নিদর্শন আমড়াতলী চেরাগ আলী উচ্চ বিদ্যালয়। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আমড়াতলী এলাকার সূর্য সন্তান চেরাগ আলী মিয়া, যিনি “বড় মিয়া” নামে সমধিক পরিচিত, তার দূরদর্শী চিন্তা ও অবদানে গড়ে উঠেছে এই বিদ্যাপীঠ। এলাকার শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার ভূমিকা আজও স্মরণীয়। এতে সহযোগিতা করেন তাঁর ভাই বজলুর রহমান (ছোট মিয়া)। তাদের এই অবদান আমড়াতলীর শিক্ষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় সৃষ্টি করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়:
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আমড়াতলীর বিখ্যাত বকুল গাছের পাশে একটি ছোট কাঁচা ঘরে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠে প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে যেখানে আব্দুল হক স্যারের বাড়ি, সেখানেই একদিন শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হতো এই শিক্ষাকেন্দ্র। এটি ছিল এলাকার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা পরবর্তীতে বড় মিয়া ও ছোট মিয়া-এর প্রচেষ্টায় বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

মাধ্যমিক শিক্ষার পথিকৃৎ:
১৯৬১ সালে “আমড়াতলী সি. আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়” নামে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে এটি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বড় মিয়া ও ছোট মিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসেন এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চেরাগ আলী মিয়া (বড় মিয়া),  বজলুর রহমান মিয়া (ছোট মিয়া) এর সাথে সাথে আরও যাদে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগীতায় গড়ে উঠেছে এ বিদ্যালয় তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য :

ডাঃ আবদুর রাজ্জাক – ভবগ্রাম
আলী আক্কাছ মজুমদার – বড়ভাতুয়া
হাজী জিন্নত আলী (কুশিরবাপ) – বড়ভাতুয়া
মকবুল আহাম্মদ ভূঁইয়া – র্পূব নলুয়া
ফয়জুল্লাহ্ খন্দকার – সাইলচোঁ
ইসমাইল মেম্বার – ফলকামুড়ী
সফর আলী ডিলার – ফলকামুড়ী
বদর উদ্দিন মেম্বার – দিগলগাঁও
ডাঃ ভগবান চন্দ্র দত্ত – কানুপুর
ডাঃ যোগেন্দ্র চন্দ্র কর – আমড়াতলী
মাষ্টার অনিল ঘোষ – র্পূব নারায়নপুর
মমতাজ উদ্দিন – র্পূব নারায়নপুর
লুৎফর রহমান মেম্বার – লগ্নসার
মিছির আলী কেরানী – ভবগ্রাম
আবদুল ওহাব আমিন – ভবগ্রাম
হাজী আমির হোসেন – সাতবাড়িয়া
কলিম উদ্দিন মেম্বার – জয়কামতা
আবদুর রশিদ মেম্বার – জয়কামতা
মোজাফ্ফর আলী – ছোটভাতুয়া এবং আরও অনেকে।

শিক্ষার আলোয় আলোকিত প্রজন্ম:
প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত সাফল্য লুকিয়ে আছে এর শিক্ষার্থীদের সাফল্যে। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হাজারো শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে নিজেদের মেধা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমড়াতলী চেরাগ আলী উচ্চ বিদ্যালয় একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে এটি গড়ে তুলছে আগামী দিনের সুনাগরিক।

শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গড়ে ওঠে চেরাগ আলীর বাজার। বাজারটি প্রথমদিকে কানুপুর গ্রামে “সুরুর বাজার” নামে পরিচিত ছিল। সেই সময়ে বরুড়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকা বোঝাই করে আসতেন ব্যবসায়ীরা। কানুপুর গ্রামের খালটি তখন ছিল জলে পরিপূর্ণ, যেখানে সারাদিন নৌকার মাঝিদের ডাকাডাকি আর মালামাল ওঠানামার কর্মব্যস্ততা দেখতে পাওয়া যেত। পরবর্তীতে বাজারটি আমড়াতলীতে স্থানান্তরিত হয়। শুরুতে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন – সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাট বসত। কিন্তু ক্রমাগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারের ফলে আজ এটি বরুড়া উপজেলার অন্যতম প্রধান ও প্রতিদিনের ব্যস্ততম বাজারে পরিণত হয়েছে।

আমড়াতলী চেরাগ আলী উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়—এটি এলাকার মানুষের অহংকার। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, শিশু শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে এর অবদান অনস্বীকার্য। আজও এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশ-বিদেশে।

বিদ্যালয় ও বাজার—দুটিই আজ আমড়াতলীর গর্ব। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার শিক্ষা ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। “শিক্ষাই আলো”—এই অমোঘ বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে আমড়াতলী চেরাগ আলী উচ্চ বিদ্যালয় এগিয়ে যাবে অনন্তকাল, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে সমাজের প্রতিটি স্তর।

অ্যালামনাই এসোসিয়েশন ::

একটি স্কুলের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন হলো প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন, যারা নিজেদের শিক্ষা জীবনের স্মৃতি, বন্ধন এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সমাজে অবদান রাখার লক্ষ্যে একত্রিত হন। এই সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও গর্ব বহন করে, এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

এসোসিয়েশনের মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন, পেশাগত ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক গঠন করতে পারেন এবং বিদ্যালয়ের যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। বিভিন্ন সময় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার, ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান, এবং সমাজসেবামূলক নানা কার্যক্রমের আয়োজন করে এই সংগঠন।

অ্যালামনাই  এসোসিয়েশন কেবল স্মৃতির টানেই গঠিত হয় না, এটি একটি মূল্যবান প্ল্যাটফর্ম যেখানে পুরাতন ও নতুন প্রজন্মের মাঝে অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণার বিনিময় ঘটে। এভাবেই একটি স্কুলের এলামনাই এসোসিয়েশন হয়ে ওঠে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি শক্তিশালী ও গর্বিত অংশ।

Scroll to Top